যেমন একটি গাছ শেকড় থেকে শুরু করে কাণ্ড গজিয়ে একসময় পূর্ণ বিকশিত হয়, তেমনি ভারতের শিক্ষার ভিত্তি তৈরি হয় STEM (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত) পড়াশোনার মাধ্যমে। এই দৃঢ় ভিত্তি প্রকৌশল পেশার জন্য প্রয়োজনীয় ভিত্তি রচনা করে, যা ক্রমাগত বিকাশ লাভ করে এবং ফল দেয়।
২০১৫ সালে ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘স্কিল ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি চালু করেন, যা ‘কৌশল ভারত, কুশল ভারত’ শ্লোগানে পরিচিত। প্রধানমন্ত্রী মতে, তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ করে গড়ে তোলার মাধ্যমে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় কর্মশক্তি সরবরাহকারী দেশে পরিণত হবে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের মধ্যে ১ লাখ ৪ হাজার STEM শিক্ষার্থী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে যাচ্ছে, যা বৈশ্বিক প্রতিভা সরবরাহে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের ইঙ্গিত দেয়। এর মানে হল যে, বর্তমান চাকরি বাজার দক্ষতাভিত্তিক প্রতিভার প্রয়োজন করছে এবং ভারত সেই চাহিদা পূরণে সক্ষম।
এই সময়ে, যখন দক্ষতা অর্জন অপরিহার্য, তখন বুঝতে হবে যে দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা এই গাছের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি হিসাবে কাজ করে। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতের প্রকৌশলীরা শুধু তাত্ত্বিকভাবে দক্ষ নয়, বরং বাস্তব কাজেও পটু হয়ে উঠবে। এই শিক্ষার ধরণ বিশ্বব্যাপী চাকরি বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের প্রকৌশলীদের সৃজনশীল ও সফল হতে সাহায্য করবে।
পুরনো একটি প্রবাদ আছে, “সব কাজ আর কোনো খেলাধুলা নয়, জ্যাককে ম্লান করে তোলে”। একে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে বলা যেতে পারে: “শুধু তত্ত্বভিত্তিক শিক্ষা প্রকৌশলীদের সাধারণ করে তোলে”। এর মাধ্যমে বর্তমান প্রকৌশল শিক্ষার প্রধান চ্যালেঞ্জটি উঠে আসে—তাত্ত্বিকভাবে দক্ষ কিন্তু বাস্তব প্রয়োগে অক্ষম গ্র্যাজুয়েটদের উত্পাদন। দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা এই ব্যবধান পূরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হাতে-কলমে অভিজ্ঞতার ওপর জোর দিয়ে, শিক্ষার্থীরা প্রকল্প, ইন্টার্নশিপ, এবং শিল্পের প্রয়োজনীয়তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কর্মশালায় অংশ নেয়। এর ফলে, তারা কাজের জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠে এবং প্রথম দিন থেকেই জটিল প্রকৌশল সমস্যা মোকাবেলার সামর্থ্য রাখে।
কিছু শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান এই শিক্ষার ধরণকে প্রণয়ন করেছে উদ্ভাবন ও বাস্তব শিক্ষা কেন্দ্র তৈরি করার মাধ্যমে। এই কেন্দ্রগুলোতে উন্নত ল্যাবরেটরি, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং শিল্প-গ্রেডের সরঞ্জাম রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা, উদ্ভাবন এবং বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেছে যা পরীক্ষণ এবং উদ্ভাবনকে অনুপ্রাণিত করে, ফলে প্রকৌশলীরা কেবল জ্ঞানসমৃদ্ধ নয়, বাস্তব জগতেও তাদের দক্ষতা প্রয়োগে সক্ষম হয়। তাদের লক্ষ্য তাত্ত্বিক কোর্সওয়ার্ক ও বাস্তব প্রয়োগের মধ্যে একটি সুমিত্র যোগসূত্র তৈরি করা, যা শিক্ষার সামগ্রিক অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করে।
এমনও বলা হয়ে থাকে যে আপনার সঙ্গ আপনার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। প্রকৌশল কলেজ ও হোস্টেলে শিক্ষার্থীদের উপর প্রায়ই সহপাঠীদের চাপ থাকে, কিন্তু সব চাপই খারাপ নয়। আজকের দিনে, প্রকৌশল সম্প্রদায় সফলভাবে একটি পরিবেশ তৈরি করেছে যা অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মধ্যে উদ্যোক্তা ভাবনাকে জাগিয়ে তোলে। তরুণ প্রকৌশলীদের ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার সম্ভাবনা বিবেচনা করে, কিছু শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান প্রি-ইনকিউবেটর, ইনকিউবেটর এবং উদ্ভাবন কেন্দ্র স্থাপন করেছে যা শিক্ষার্থীদের স্টার্টআপের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ, পরামর্শ এবং তহবিল সরবরাহ করে। এই ইনকিউবেটরগুলো নতুন ধারণার জন্মভূমি হিসেবে কাজ করে, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ভাবনী ধারণাগুলোকে কার্যকর ব্যবসায়ে রূপান্তরিত করতে পারে।
এই ধরনের উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের একটি শক্তিশালী উদ্যোক্তা মানসিকতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে, যা প্রকৌশল শিল্পের প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে সাফল্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তারা ব্যবসা পরিচালনার জটিলতা, তহবিল সংগ্রহের কৌশল এবং বাজারের গতিশীলতা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে, যা তাদের স্টার্টআপগুলোকে সফলতার পথে নিয়ে যেতে পারে। তাছাড়া, এই প্রোগ্রামগুলো প্রায়ই শিল্প নেতাদের এবং সরকারী সংস্থার সাথে সহযোগিতা করে, যা শিক্ষার্থীদের এমন একটি নেটওয়ার্ক সরবরাহ করে যা তাদের উদ্যোগকে সফলতার শিখরে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে।