প্রযুক্তির উন্নতি অবিশ্বাস্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এটি অনেক শিল্পকে নতুন করে ঢেলে সাজাচ্ছে। শিক্ষা ক্ষেত্রও এর ব্যতিক্রম নয়। উন্নত শেখার পদ্ধতি এবং প্রশাসনিক প্রক্রিয়াগুলোর সহজীকরণের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) শিক্ষাকে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনের সঙ্গে আরও মানানসই করেছে। একইভাবে, এটি আন্তর্জাতিক ও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রেও বড় পরিবর্তন আনছে, বিদেশে পড়াশোনার জন্য শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ ধারণা বদলে দিয়েছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নেতৃত্বে প্রযুক্তির এই বিপ্লব আন্তর্জাতিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে মূল থেকে পুনর্গঠন করছে। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে, ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী শিক্ষার বাজারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আয় ৫৪৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার বার্ষিক বৃদ্ধির হার (CAGR) ৪৭.২ শতাংশ। ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ৫৫,৪৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাতে পারে। বিশ্বজুড়ে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং পাঠক্রমে পরবর্তী প্রজন্মের প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করছে।
আন্তর্জাতিক শিক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংযোজন বৈশ্বিকভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যক্তিগত শেখার পথে একটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। এর পাশাপাশি, শিক্ষা পরামর্শদাতা এবং প্রদানকারীদের জন্য প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়িয়ে এটি দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার খাতকে পুনঃসংজ্ঞায়িত করতে সাহায্য করছে। ফলে যারা এই প্রযুক্তিগত উন্নয়নগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে, তারা ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে সাফল্যের শিখরে উঠতে সক্ষম হচ্ছে।
এআই এবং মেশিন লার্নিং কোর্সের প্রতি আগ্রহ
প্রায় প্রতিটি শিল্পেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি প্রধান ভূমিকা পালন করছে। এটি নতুন চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করেছে, যেখানে নির্দিষ্ট দক্ষতার প্রয়োজন হয়। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং কোর্সে পড়াশোনা করতে আবেদনকারী ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বছরে চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের প্রচুর মেধাবী শিক্ষার্থীর উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের এসব প্রতিষ্ঠানে এই কোর্সগুলোর চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের সহায়তা ও যোগাযোগ বৃদ্ধি
আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রজন্ম ভিত্তিক এআই প্রযুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করছে এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দ্রুত এবং উন্নত যোগাযোগের জন্য এআই চ্যাটবট প্রয়োগ করছে। এই প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সহায়তা প্রদান করছে, তাদের উদ্বেগগুলো সমাধান করছে এবং যেকোনো সময় তথ্য সরবরাহ করছে। এর ফলে ভর্তি প্রক্রিয়া, কোর্সের বিবরণ, ফি কাঠামো, ক্যাম্পাস সুবিধাসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীরা সহজেই তথ্য পেতে পারছে। এটি শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করেছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যক্তিগতকৃত শিক্ষা অভিজ্ঞতা তৈরি করছে।
ভাষার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারের ফলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার ক্ষেত্র আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়ে উঠছে। ভাষা শেখা এবং অনুবাদের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি অসাধারণ সাড়া ফেলছে। বিভিন্ন ভাষার শিক্ষার্থীরা এখন দ্রুত বহুভাষিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভাষা সরঞ্জামের মাধ্যমে কোর্সের বিষয়বস্তু ও শিক্ষকদের সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ করতে পারছে, যা শিক্ষার পরিবেশকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তুলছে। একইভাবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও প্রশাসনিক প্রক্রিয়াগুলো সহজ করতে এআই সরঞ্জাম ব্যবহার করছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের শিক্ষা মডেলগুলোকে আরও বিস্তৃত এবং বহুমুখী শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাক্সেসযোগ্য করে তুলছে।