করোনা সংক্রমণের ভয়ে অনেক প্রসূতি হাসপাতালে যাননি। আবার হাসপাতালেও যথাযথ চিকিৎসা পাওয়া যায়নি বলে মৃত্যু বেশি ছিল।

করোনা মহামারির ব্যাপক সংক্রমণের দুই বছরে সরকারি হাসপাতালে নবজাতক ও মাতৃমৃত্যুর হার অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল। করোনার আগে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে মাতৃমৃত্যুর হার ৪৪ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ১৩ শতাংশ বেড়েছিল। একই সময় নবজাতক মৃত্যুর হার বেড়েছিল যথাক্রমে ১ ও ৬ শতাংশ। স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হওয়ায় এবং হাসপাতালে এসে প্রসবসেবা কম নেওয়ায় মা ও নবজাতকের মৃত্যু বেড়েছিল বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত ৫৮৬টি হাসপাতালে সন্তান প্রসব, নবজাতকের জীবিত জন্ম এবং মৃত্যুর হিসাব বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ৫৮৬টি সরকারি হাসপাতালের মধ্যে ৪৩০টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৩৩টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জেলা পর্যায়ে ১০ থেকে ২৫০ শয্যার ১২৩টি হাসপাতাল রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, করোনার ঊর্ধ্বগতির দুই বছরে হাসপাতালে এসে প্রসবসেবা নেওয়ার হার ১০ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছিল। তবে হাসপাতালে সেবা নেওয়ার হার এখন আবার বেড়েছে। ফলে চলতি বছর মৃত্যুহারও কমে এসেছে। ২০১৯ সালের তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে মাতৃমৃত্যু ১৯ শতাংশ এবং নবজাতকের মৃত্যু ১২ শতাংশ কমেছে।

২০২০ ও ২০২১ সালে করোনা সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি ছিল। ওই সময় বিশ্বজুড়েই মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ বছর পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হচ্ছে। সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের সেবা গ্রহণ, প্রসবপূর্ব সেবা, নিরাপদ প্রসব ও নবজাতকের মৃত্যু কমাতে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে।

মো. শামসুল হক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন পরিচালক (মা, নবজাতক শিশু ও কিশোর-কিশোরীর স্বাস্থ্য)

চিকিৎসকেরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির সময়ে হাসপাতালগুলোতে ঠিকমতো প্রসূতি মায়ের সেবা দেওয়া যায়নি। আবার সংক্রমণের ভয়ে অনেক প্রসূতি হাসপাতালে আসেনি। প্রসবপূর্ব সময়ে যথাযথ সেবা না পেয়ে স্বাস্থ্যে জটিলতা তৈরি, প্রসবকালে হাসপাতালে সেবা না পাওয়া বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিশু জন্ম, কম ওজন নিয়ে শিশুর জন্ম, জন্মের পর নবজাতকের যথাযথ যত্নের অভাব ইত্যাদি কারণে মা ও নবজাতকের মৃত্যু বেড়েছিল।

৫৮৬ হাসপাতালের তথ্যে উল্লেখ করা হয়, ২০১৯ সালে ৯৬৭ মা ও ৬ হাজার ৮৪৬ নবজাতক; ২০২০ সালে ১ হাজার ১১৩ মা ও ৫ হাজার ৬৫০ নবজাতক; ২০২১ সালে ৯৭২ মা ও ৬ হাজার ৪৫৩ নবজাতক এবং চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৪৪০ মা ও ৩ হাজার ৩৫৫ নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন পরিচালক (মা, নবজাতক শিশু ও কিশোর-কিশোরীর স্বাস্থ্য) মো. শামসুল হক প্রথমআলোকে বলেন, ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনা সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি ছিল। ওই সময় বিশ্বজুড়েই মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ বছর পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হচ্ছে। সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের সেবা গ্রহণ, প্রসবপূর্ব সেবা, নিরাপদ প্রসব ও নবজাতকের মৃত্যু কমাতে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে। ৪৪টি জেলায় নবজাতক শিশুর বিশেষ সেবা ইউনিট (স্ক্যানু) চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি জেলাগুলোতেও এই সেবা চালু করা হবে।

বোন ও নবজাতক দুজনই অসুস্থ। রাজধানীর শান্তিবাগ এলাকায় বোন থাকেন। বাড়িতে ধাত্রীর মাধ্যমে সন্তান প্রসব করাতে গিয়ে তাঁর স্বাস্থ্যের বেশ ক্ষতি হয়েছে। ধাত্রী সন্তান প্রসব করাতে ব্যর্থ হলে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে যান। রোগীর অবস্থা দেখে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ভর্তি রাখেনি। পরে তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

আয়েশা আক্তারের, হাসপাতালের করিডরে কথা হয় আসিয়ার বোন

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২০’ অনুসারে, দেশে প্রতি লাখ জীবিত নবজাতক জন্মের পর মাতৃমৃত্যু ১৬৩। নবজাতকের মৃত্যু প্রতি হাজারে ১৫।

আবার জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের (নিপোর্ট) করা বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু ও স্বাস্থ্যসেবা জরিপ (বিএমএমএস) ২০১৬–এর তথ্যমতে, দেশে এক লাখ শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে ১৯৬ মায়ের মৃত্যু হয়।

সন্তান গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের পর ৪২ দিনের মধ্যে প্রসূতির মৃত্যু হলে তাকে মাতৃমৃত্যু হিসেবে গণ্য করা হয়। জন্ম থেকে ২৮ দিন পর্যন্ত একটি শিশুকে নবজাতক বলা হয়ে থাকে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেসব অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা আসেন, যাঁদের অবস্থা বেশ জটিল। ৯০ শতাংশ মা অন্য হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরিত হয়ে আসেন। এসব কারণে টারশিয়ারি পর্যায়ের (তৃতীয় ধাপের) সরকারি হাসপাতালে মা ও নবজাতকের মৃত্যুহার তুলনামূলক বেশি।

মো. আশরাফুল আলম, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক

মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যঝুঁকি, অপ্রতুল সেবা

গত ৩১ মে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে মেয়েসন্তানের জন্ম দেন আসিয়া আক্তার। এটি তাঁর প্রথম সন্তান। হাসপাতালের করিডরে কথা হয় আসিয়ার বোন আয়েশা আক্তারের সঙ্গে। প্রথমআলোকে তিনি বলেন, বোন ও নবজাতক দুজনই অসুস্থ। রাজধানীর শান্তিবাগ এলাকায় বোন থাকেন।

বাড়িতে ধাত্রীর মাধ্যমে সন্তান প্রসব করাতে গিয়ে তাঁর স্বাস্থ্যের বেশ ক্ষতি হয়েছে। ধাত্রী সন্তান প্রসব করাতে ব্যর্থ হলে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে যান। রোগীর অবস্থা দেখে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ভর্তি রাখেনি। পরে তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

দেশে এখনো ৫০ শতাংশ প্রসব বাড়িতে হয়ে থাকে। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে এসে প্রসবসেবা নিতে সচেতনতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি সেবা কেন্দ্রগুলোকে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের সেবার জন্য আরও উপযোগী ও আধুনিক করতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের জন্য ২৪ ঘণ্টা সেবাব্যবস্থা চালু থাকা জরুরি।

অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সংগঠন অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সভাপতি

আয়েশা আরও বলেন, প্রসবে দেরি হওয়ায় শিশুটি মায়ের পেটে মলত্যাগ করে খেয়ে ফেলেছে। তাকে নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (এনআইসিইউ) ভর্তি করতে বলেছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু কোনো শয্যা খালি নেই। তাই তাকে সেখানে ভর্তি করাতে পারেননি তাঁরা।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এনআইসিইউতে মাত্র ৪২টি শয্যা আছে। গত ৩১ মে এনআইসিইউ ও নবজাতক ওয়ার্ডের (২১১ নম্বর) সামনে গিয়ে দেখা গেল, অনেক উদ্বিগ্ন অভিভাবক সন্তানকে এনআইসিইউতে ভর্তির আশায় আবেদন জমা
দিয়ে যাচ্ছেন।

কেরানীগঞ্জ থেকে আসা রেহানা আক্তার নামের এক মায়ের সন্তান পাঁচ দিন বয়সে ১৪ মে এনআইসিইউতে ভর্তি হয়। সিক্ত চোখে এই মা প্রথমআলোকে বলেন, ছেলের ওজন মাত্র দেড় কেজি। শ্বাসকষ্ট আছে। জন্মের পর পাঁচ দিন বেসরকারি হাসপাতালে রাখার পর এই এনআইসিইউয়ে শয্যা পান। তিনি বলেন, তাঁর আরও দুটি সন্তান রয়েছে। তবে ওই দুটি সন্তানের মধ্যে তাঁর দুবার গর্ভপাত হয়েছে।

গত ২৯ আগস্ট শিশুটির বাবা মো. ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, তাঁদের সেই শিশুসন্তান মারা গেছে। তিনি বলেন, সন্তান কিছুটা সুস্থ হলে জুনের মাঝামাঝি বাড়ি নিয়ে যান। ১৫ দিন পর আবার অসুস্থ হলে রাজধানীর ‘মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার এবং ১০০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুস্বাস্থ্য হাসপাতাল’–এ নিয়ে যান। সেখান থেকে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে আইসিইউতে শয্যা না পেয়ে সন্তানকে ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। ১১ জুলাই হাসপাতালে তাঁর সন্তান মারা যায়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মো. আশরাফুল আলম প্রথমআলোকে বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেসব অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা আসেন, যাঁদের অবস্থা বেশ জটিল। ৯০ শতাংশ মা অন্য হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরিত হয়ে আসেন। এসব কারণে টারশিয়ারি পর্যায়ের (তৃতীয় ধাপের) সরকারি হাসপাতালে মা ও নবজাতকের মৃত্যুহার তুলনামূলক বেশি।

আশরাফুল আলম বলেন, গর্ভকাল মোটামুটি দীর্ঘ একটা সময়। ফলে ২০২০ সালের করোনা সংক্রমণের উচ্চ হারের সময়ের মা ও শিশুস্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাবের জের ২০২১ সালেও ছিল। এই দুটি বছর স্বাস্থ্যসেবা করোনাকেন্দ্রিক ছিল। মা ও শিশুস্বাস্থ্যের ওপর নজর ছিল তুলনামূলক কম। অনেক মা প্রসবপূর্ব ও প্রসব–পরবর্তী সেবা যথাযথভাবে নেননি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ৫৮৬ সরকারি হাসপাতালে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে সন্তান প্রসব ১৮ শতাংশ কম হয়েছে। একইভাবে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২১ সালে প্রায় ১০ শতাংশ প্রসব কম হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে সন্তান প্রসব হয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার ২২৮টি। দিন হিসেবে গড় করলে ২০১৯ সালের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে সন্তান প্রসবের হার ৪ শতাংশ কম। তবে ২০২০ ও ২০২১ সালের তুলনায় যথাক্রমে ১৫ ও ৬ শতাংশ বেশি।

বেশির ভাগ মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মনীষা ব্যানার্জি প্রথমআলোকে বলেন, বেশির ভাগ নবজাতকের মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। অনেক শিশু স্বল্প ওজন ও অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেয়। অনেক শিশুর জন্মের সময় শ্বাসকষ্ট হয়। যেকোনো কারণে ঠিকমতো শ্বাস নিতে না পারলে মস্তিষ্কসহ দেহে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। অনেক শিশু জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মায়। এ ধরনের শিশুদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি। এ জন্য নিরাপদ প্রসব খুবই জরুরি।

অধ্যাপক মনীষা আরও বলেন, যাঁর হাতে সন্তানের জন্ম হয়, তাঁকে অবশ্যই পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে। সুস্থ সন্তানের জন্য মাকে নিয়মিত প্রসবপূর্ব সেবা নিতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। জন্মের পর পর যেন শিশুর সংক্রমণ না হয়, সে জন্য বাড়তি যত্ন নিতে হবে। এসব ব্যবস্থা নিয়ে নবজাতক মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম চার মাসে যেখানে মাসে গড়ে ৩১টি নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে, সেখানে ২০২১ সালের প্রথম চার মাসে গড়ে ৩২টি নবজাতকের মৃত্যু হয়।

নবজাতকের মৃত্যু প্রতিরোধে অপ্রতুল স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক মনীষা ব্যানার্জি বলেন, সরকার নবজাতকের মৃত্যু প্রতিরোধে অনেক লক্ষ্য পূরণ নিয়ে এগোচ্ছে। তবে সেবাব্যবস্থা আরও বাড়াতে হবে। একটি শিশু থেকে অন্য শিশুর মধ্যে সংক্রমণ এত দ্রুত ছড়ায় যে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের মতো এক শয্যায় দু–তিনজন শিশুরোগী রাখা সম্ভব নয়। একটি শিশুর জন্য একটি শয্যা লাগবে। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে এনআইসিইউ, স্ক্যানু, ক্যাঙারু মাদারকেয়ার সেবা আরও বাড়ানো জরুরি।

বিএমএসএস জরিপ ২০১৬ অনুসারে, সন্তান প্রসবের সময় মাতৃমৃত্যুর ৫৪ শতাংশই ঘটে থাকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও খিঁচুনির কারণে।

যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা গেলে বেশির ভাগ মাতৃমৃত্যুও প্রতিরোধ করা যায় বলে মন্তব্য করেছেন স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সংগঠন অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সভাপতি অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম। তিনি প্রথমআলোকে বলেন, দেশে এখনো ৫০ শতাংশ প্রসব বাড়িতে হয়ে থাকে।

স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে এসে প্রসবসেবা নিতে সচেতনতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি সেবা কেন্দ্রগুলোকে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের সেবার জন্য আরও উপযোগী ও আধুনিক করতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের জন্য ২৪ ঘণ্টা সেবাব্যবস্থা চালু থাকা জরুরি। অথচ দেশের ইউনিয়ন ও উপজেলা সেবা কেন্দ্রের বেশ কটিতে চিকিৎসক নেই, মিডওয়াইফ নেই।

অধ্যাপক ফেরদৌসী আরও বলেন, দেশে এখনো মাতৃমৃত্যুর হার বেশ উচ্চ। স্বাস্থ্যসেবা খাতে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নিলে ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী জীবিত নবজাতক জন্মের পর প্রতি লাখে মাতৃমৃত্যু ৭০ জনে নামিয়ে আনা কঠিন হবে।