টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের গত দুটি আয়োজন করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সীমিত ভার্চ্যুয়াল ও সরাসরি আয়োজনের মিশ্রণে হয়েছিল। সোমবার থেকে এ উৎসব আবার ফিরছে গতানুগতিক ধারার দর্শক-অতিথি ও চলচ্চিত্র অনুরাগীদের সরাসরি উপস্থিতিতে আয়োজিত বর্ণাঢ্য আয়োজনে। করোনাভাইরাসের প্রভাব থেকে জাপান এখনো পুরোপুরি মুক্ত না হতে পারলেও উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান আন্দো হিরোইয়াসু এ বছরের উন্মুক্ত আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সব রকম সতর্কতা অবলম্বন করবেন। এ বছরের উৎসবের ৩৫তম আয়োজনে মোট ছবি জমা পড়েছে ১ হাজার ৬৯৫টি। ১০৭টি দেশ ও ভূখণ্ডের চলচ্চিত্রের নির্মাতারা প্রতিযোগিতার জন্য তাঁদের ছবি পাঠিয়েছেন।
এসব ছবির মধ্যে থেকে সেরা কাজ হিসেবে বাছাই করে নেওয়া কিছু ছবি দুটি বিভাগের প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে এবং এর বাইরে আরও ১১০টি ছবি উৎসব চলাকালে বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হবে।
উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের জন্য নির্বাচিত ১৫টি ছবির মধ্যে জাপানি পরিচালকদের তৈরি ২টি ছবি ছাড়াও আরও আছে চিলি, তিউনিসিয়া, স্পেন, ইতালি, ইরান, মেসেডোনিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান ইসরায়েল, ইরান, শ্রীলঙ্কা, সাইপ্রাস ও ভিয়েতনামের পরিচালকদের ছবি। চার সদস্যের জুরি এসব ছবির মধ্য থেকে সেরা ছবি বেছে নেবেন। এ ছাড়া শ্রেষ্ঠ পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং শৈল্পিক অবদানের সেরা পুরস্কারও এই বিভাগে অন্তর্ভুক্ত আছে। ২ নভেম্বর উৎসবের শেষ দিনে পুরস্কার ঘোষণা করা হবে।
প্রতিযোগিতার অন্য একটি বিভাগ হচ্ছে এশিয়ার ফিচার ছবি শাখা। যে ১০টি ছবি এই বিভাগের প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে আছে ইসরায়েল, ইরান, তুরস্ক, চীন, ভারত ও জাপানের নির্মাতাদের ছবি।
প্রতিযোগিতার বাইরে আরও যে দুটি পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে সেগুলো হলো, চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশে দীর্ঘ সময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ও কুরোসাওয়া আকিরা পুরস্কার। বিশ্ব চলচ্চিত্রে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে যাওয়া চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্বদের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে পুরস্কারটি প্রবর্তন করা হলেও ১৪ বছর ধরে পুরস্কার দেওয়া বন্ধ ছিল। দীর্ঘ বিরতি শেষে আয়োজক কমিটি এ বছর থেকে আবার এটি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ও কুরাসাওয়া আকিরা পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে এবং উৎসব চলাকালে সেই পুরস্কার তাঁদের হতে তুলে দেওয়া হবে।
লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার পাচ্ছেন দীর্ঘকাল ধরে চিত্রনাট্য রচনা ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয় দেখাশোনা করা বর্ষীয়ান নোগামি তেরুইয়ো। ৯৪ বছর বয়সী নোগামি ১৯৫০ সালে কুরোসাওয়ার রাশোমন ছবির চিত্রনাট্য রচনার তত্ত্বাবধান করার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রের জগতে প্রবেশ করেন এবং কুরোসাওয়ার অধিকাংশ ছবিতে কাজ করা ছাড়াও জাপানের অন্যান্য বিখ্যাত পরিচালকের সঙ্গেও তিনি কাজ করেছেন।
চলচ্চিত্রের আন্তর্জাতিক অঙ্গনের যে দুজন বিখ্যাত পরিচালক এ বছর যৌথভাবে কুরোসাওয়া আকিরা পুরস্কার পাচ্ছেন তাঁরা হলেন, মেক্সিকোর চলচ্চিত্র পরিচালক আলেহান্দ্রো গনজালেস ইনাররিত্তু ও জাপানি পরিচালক ফুকাদা কোজি।
ইনাররিত্তুর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি ‘আমোরেস পেরেস’ ২০০০ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে চলচ্চিত্র সমালোচকদের পুরস্কার জেতা ছাড়াও একই বছর টোকিও চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার পেয়েছিল। পরবর্তী সময়ে নির্মিত তাঁর আরও কয়েকটি ছবি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছে এবং ছায়াছবির জগতে তিনি পরিচিত ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন।
২৯ অক্টোবর বিশেষ এক অনুষ্ঠানে কুরোসাওয়া আকিরা পুরস্কার দুই বিজয়ীর হাতে তুলে দেওয়া হবে। অন্যদিকে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে উৎসবের শেষ দিনে সমাপনী অনুষ্ঠানে।